সীতাকুন্ডে জ্বালাও পোড়াও দেখে প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন



সীতাকুন্ডে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যে ভয়াবহ জ্বালাও পোড়াও চলছে তাতে দারুন উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম থেকে কোন কর্মকর্তা ঢাকায় গেলেই তিনি সীতাকুন্ড সম্পর্কে জানতে চান। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি সফরে এসেও চট্টগ্রামের যেসব সরকারি কর্মকর্তার সাথে তার দেখা হয়েছে সবার কাছে শুধু সীতাকুন্ডের খোঁজ খবর নিয়েছেন তিনি। এছাড়া চট্টগ্রামের আর কোন বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেননি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে সীতাকুন্ড উপজেলা, মিলনায়তনে আয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত মত বিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান একথা বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, সীতাকুন্ডের অনেক সুনাম আমরা শুনেছিলাম। এটি ছিলো শান্তি ও সৌন্দর্য্যের জনপদ। কিন্তু এখন এ উপজেলাটি আতংকের জনপদে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে জ্বালাও পোড়াও করতে বহিরাগত বহু সন্ত্রাসীকে এখানে পোস্টিং করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য আছে কার বাড়িতে এসব সন্ত্রাসীকে গরু জবাই করে খাইয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে পাঠানো হয়। অর্থের বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে ভাঙচুর, ব্যারিকেড দিয়ে সারাদেশের লাইফ লাইন এই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি আশ্চর্য হয়ে বলেন, আমি এখানে এসে দেখলাম ÿমতায় থাকার পরও সরকারি দল কতটা অসহায়। এ ধরণের ঘটনা ব্যতিক্রম হলেও তিনি মনে করেন এটি রাজনীতির জন্য ইতিবাচক। স্থানীয় সাংসদ এবিএম আবুল কাসেম কোন ধংসাত্মক কর্মকান্ড বা খুনের রাজনীতি করেন না বলে আজ এ অবস্থা। তবে এর মানে এই নয় যে তিনি দুর্বল। এদিন বিকাল ৩টায় শুরম্ন হওয়া এ জরম্নরি সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রামত্ম সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ এবিএম আবুল কাসেম এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুলস্না আল বাকের ভূঁইয়া, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শাহীন ইমরান, চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার, এসএসআই চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. ইউনুস, র‌্যাব-৭ এর মেজর মো. ছিদ্দিকুর রহমান, বিজিবির মেজর মো. সাবিবর, থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান, পৌরসভার প্যানেল মেয়র জুলফিকার আলী শামীম, ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামী, রায়হান উদ্দিন, রেজাউল করিম বাহার, ছাদাকাত উল্লাহ, শওকত আলী জাহাঙ্গীর, মোঃ জসীম উদ্দিন, নুর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, নুরুল আনোয়ার, আ’লীগ নেতা আ ম ম দিলশাত, গোলাম মহিউদ্দিনসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান উপস্থিতিদের কাছে এ সভার উদ্দ্যেশ্য বর্ণনা করে বলেন, সীতাকু- এখন একটি আতংকের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এখানে যেসব ঘটনা ঘটতে শুরম্ন করেছে তা কারো কাছেই কাম্য হতে পারে না। তাই কেন এসব হচ্ছে আর কিভাবে এসব অপকর্ম প্রতিরোধ করা যায় সবার কাছে সে পরামর্শ চান তিনি। প্রথমে ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ তাদের অভিমত প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। এসব তারা বলেন, স্থানীয় কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী বহিরাগত ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী এনে এখানে জ্বালাও পোড়াও চালাচ্ছে। রাতে গাড়ি পুড়িয়ে দিনে তারা আবার অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মিছিল করছে। কিন্তু প্রশাসন কাউকে গ্রেপ্তার করে না। যদিও দু’য়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয় তারা একদিনেই জামিন পেয়ে যাচ্ছে। পরে ফিরে এসে দ্বিগুন উৎসাহে এসব অপকর্ম ঘটাচ্ছে তারা। এসব সরকার দলীয় কয়েকজন চেয়ারম্যান এ অবস্থার জন্য আ’লীগের নেতৃবৃন্দকে দায়ী করেন। তারা বলেন, নেতৃবৃন্দের সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা না থাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা আ’লীগ এখন মাঠে নেই। আর এ সুযোগে বিএনপি-জামায়াত ভাড়াটিয়া দিয়ে এলাকা দখল করতে চায়। সাম্প্রতিক অবস্থা প্রসঙ্গে ওসি এসএম বদিউজ্জামান বলেন, একসময় এখানে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করত। তিনি আসার পর সেটা কমেছে। এছাড়া যেখানে কোন ঘটনার খবর পান তিনি তাৎÿণিক গিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। মামলা ও গ্রেপ্তার অব্যহত রয়েছে। তবে কোন সন্ত্রাসী চিহ্নিত করা বা গ্রেপ্তারে জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পান না বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি। উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুলস্না আল বাকের ভূঁইয়া ও এমপি এবিএম আবুল কাসেম এসব ঘটনার জন্য বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করেন। তারা বলেন, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর ইন্ধনে এসব ঘটনা ঘটছে। আসলাম চৌধুরী এখানে জ্বালাও পোড়াও, ভাঙচুর, ব্যারিকেড করে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে নমিনেশন চূড়ান্ত করতে চায়। তারা আরো বলেন, সীতাকুন্ডে আ’লীগের সাংগঠনিক অবস্থা মোটেও দুর্বল নয়। যদি তাই হতো এখানে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র এমনকি ৯টি ইউপির মধ্যে ৬টিতে আ’লীগ নির্বাচিত হতো না। অল্প সময়ের মধ্যেই সাংগঠনিক মিটিংয়ের মাধ্যমে আ’লীগ আবার মাঠে নামবে বলে তারা জানান। মিটিংয়ে উপস্থিত চট্টগ্রামরে পুলিশ সুপার মো. হাফিজ আক্তার বলেন, রাতে গাড়ি ভাঙচুর পোড়ানোকে অনেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নয় বলে দাবি করেন। কিন্তু যেহেতু কর্মসূচির সময়ে হচ্ছে তাই আমি মনে করি এগুলি রাজনৈতিক। কিন্তু রাজনীতির নামে কাউকেই যা খুশি তা করতে দেওয়া হবে না। সবার সহযোগিতা পেলে এসব অপরাধীদের নির্মূল করা সম্ভব। বাড়বকুন্ডে র‌্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। একটি বিজিবি ক্যাম্পও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া এখন থেকে দুষ্কৃতিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান জোরদার হবে বলে জানান তিনি।

No comments:

Post a Comment